আপনি কি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন? নিজের উপর বিশ্বাস রাখো

আপনি কি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন? নিজের উপর বিশ্বাস রাখো

 

বিশ্বাস অনেক বড় একটি ধারণা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ধরণ ভিন্ন ভিন্ন। আমরা বিভিন্ন ধরণের বিশ্বাসের সাথে পরিচিত। অন্যের প্রতি বিশ্বাস, নিজের প্রতি বিশ্বাস, নিজের লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাস, নিজের আদর্শে প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি। সব ধরণের বিশ্বাসের সাথে একটা ব্যাপার কমন রয়েছে। আর সেটি হলো সাফল্যের মূল ভিত্তি এটি। তাই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটা খুবই জরুরী। 

নিজের উপর বিশ্বাস

নিজের উপর, আদর্শ বা লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাস করতে পারাটা একজন সফল মানুষের অন্যতম গুণ। আমরা যখন বয়সে ছোট মানুষদের কোন বিষয়ে সাহস দেই তখন একটি কমন কথা বলে থাকি ‘নিজের উপর বিশ্বাস রাখো’। বড়দের ক্ষেত্রে যদি কখনো প্রয়োজ হয় তখন তাকে বলা হয়ে থাকে ‘নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন’। এখন আপনি নিজে কতটুকু আপনার নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন। সফল মানুষেরা সবকিছুর পর নিজের আদর্শ এবং লক্ষ্যের প্রতি আস্থা রাখেন। 

জীবনে চলার পথে নানা রকম প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে হয়। প্রতিকূলতা যত বেশি কঠিন হয় জীবন ততবেশি কঠিন লাগে। আর সেই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বের হওয়াটা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে। আমি নিজে যতবার এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করছি ততবার মনে হয়েছে আমি শেষ। আর সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এখানেই শেষ করতে হবে। আমার মনে হয় এতো বড় কঠিন রাস্তা পার হওয়ার মতো শক্তি ও সাহস কোনোটাই আমার নেই। 

যতক্ষণ না আমরা আমাদের উপরে বিশ্বাস করবো ততক্ষণ দুনিয়ার কেউ আমাদেরকে বিশ্বাস করবে না। তাই নিজের উপরে বিশ্বাস রাখুন। আবার সফল হতে হলে বড় চিন্তা ভাবনা করা মানুষদের আশে-পাশে থাকতে হবে। যদি আপনি ছোট চিন্তা-ভাবনা করা মানুষদের মাঝে আমরা ঘিরে যাই তাহলে আমাদের চিন্তা-ভাবনা তাদের মতো হয়ে যাবে। আমাদের চরিত্র তাদের মতো হয়ে যাবে।

আমরাও তাদের মতো বলতে থাকবো যখন পরিস্থিতি ঠিক হবে তখন কাজ শুরু করবো। পরিস্থিতি কখনোই পারফেক্ট হয় না। পরিস্থিতি সব সময় আমাদেরকেই পারফেক্ট বানিয়ে নিতে হয়। আর আপনি যদি পারফেক্ট পরিস্থিতির অপেক্ষা করেন তাহলে আপনি বসে থাকেন সারাজীবন। যেমনি ভাবে বসে আছে অন্যরা।

আর যদি জীবনে সত্যিই কিছু করতে চাও তাহলে কখনো কোনো কাজে হার মেনে নিও না। নিজেকে নিজে বিশ্বাস করো। জীবনে হার মেনে নেওয়া খুবই সহজ। কিন্তু টিকে থাকা খুবই কঠিন হয়। তাই আমাদেরকে টিকে থেকে যেকোনো মূল্যে লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। এ কারণেই যারা কোনো পরিস্থিতিতে কাজ করে যেতে পারেন দিন শেষে তারাই সফল ব্যক্তি।

তরুণদের নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস

তরুণরা আমাদের আগামী প্রজন্ম। তরুণদের মাঝে আমরা সব সময় একটা আশার সম্ভাবনা দেখতে পাই। তরুণদের স্বপ্নগুলো আমাদের সম্ভাবনার সৃষ্টি করে এবং সেখান থেকে আমরা আশাবাদী হয়ে থাকি। তরুণদের উপর বিশ্বাস রাখা মানে ভবিষ্যতের উপরে বিশ্বাস রাখা। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে একটি কথাই বলবো নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস রাখো। তোমার নিজের শক্তিই পারে তোমাকে এগিয়ে নিতে, নিজের স্বপ্ন এবং বিশ্বাসের কাছে হার না মেনে নিতে।

আমাদের জীবনে প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। সমস্ত বাঁধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তার সমাধান বের করে আত্ম-বিশ্বাস আর চিন্তা-শক্তি তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে। সময়ের সাথে নিজেকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ভাবনাটা আমাদের মধ্যে থাকতে হবে। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে ইতিহাস তরুণদের গড়ে না বরং তরুণরাই ইতিহাস গড়ে থাকে। 

মানুষে কথায় কান না দেয়া

সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা নিজে কিছু করবে না অন্যকেও কিছু করতে দিবে না। তারা শুধু মানুষের সমালোচনা করতেই বেশী ভালোবাসে। আপনি কি করছেন, কি খাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন এসব নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। আপনি যদি ভালো কাজ করে থাকেন তারপরেও তারা সমালোচনা করে থাকে এবং খারাপ কাজ করলেও তারা সমালোচনা করে থাকেন।

সমাজের বুকে এমন হাজার মানুষ আছেন যারা মানুষের ভালো দেখলে তাদের গা জ্বলে উঠে। আপনি যখন ভালো কিছু করার মনোভাব বা মানসিকতা তৈরি করবেন তখন দেখবেন অনেক বাঁধা আপনাদের সামনে উপস্থিত হবে। তারা আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দিবে না। তারা বলবে না এই কাজটি করা যাবে না। এই কাজটি করলে আপনি সফল হতে পারবেন না। এই কাজটি না আপনি ওই কাজটি করুন তাহলে তাড়াতাড়ি সফল হতে পারবেন।

মূলত সে আপনার কাজের মন-মানসিকতা নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই এই কাজটি করে থাকেন। যারা এই বিষয়টি বুঝতে পারেন তারা তো ভালোই আর যারা বুঝতে পারেন না তারাই জীবনে ব্যর্থ। তাই আপনাকে মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের ভালো নিজেকেই খুঁজতে হবে। অন্য মানুষের কথায় কান না দেওয়াই উচিত। 

কঠোর পরিশ্রমী হওয়া

মানুষের জীবন একটাই। এই জীবনে একবার ব্যর্থতায় উপনীত হলে হাজার চেষ্টা করলেও আর কিছুই করার থাকবে না। আপনি যদি সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে আপনার কাজকে ফুটিয়ে তুলতে না পারেন তাহলে আপনার জীবন কেটে যাবে সাধারণ মানুষের মতো কোনো রকম ভাবে। যে কোনো উপায়ে আপনি একটি পরিকল্পনাতৈরি করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করেন।

কাজ করার মাধ্যমে বা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই প্রকৃত সাফল্য আসে। এলিজা কার্সন বলেন-’Always follow your dream and don’t let anyone take it from you’ অর্থাৎ, সর্বদা আপনার স্বপ্ন অনুসরণ করুন এবং কাউকে তা আপনার কাছ থেকে কেড়ে নিতে দেবেন না। স্বপ্নটা আপনার তাই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব ও আপনার। তবে নিজেকে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত করবেন না। দীর্ঘদিন লালন করা স্বপ্নকে ভেঙে যেতে দিবেন না।

দিন শেষে রাত নামলে কষ্টটা তখনই হয় কেনো এতো সুন্দর দিনটাকে নষ্ট হতে দিলাম। চাইলে এই দিনটাকে আমি ভালো কিছু করতে পারতাম। কিন্তু রাত নেমে আসার পর আর আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা দিন স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাই সময় থাকতে নিজেকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। আপনাদের স্বপ্নগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিন এবং ভবিষ্যতকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলুন। 

শেষ কথা

যতক্ষণ আমি আমার মনের নিজের মালিক থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত জীবন যত কঠিনই হোক সেটা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। মন যখন আমার মালিক হয়ে যাবে তখন সে তার স্থির করা মাইন্ডসেটের দিকেই হাঁটবে। মনের কাছে নিজের কন্ট্রোলিং পাওয়ার দেওয়া যাবে না এবং নিজের উপর থেকেও বিশ্বাস হারানো যাবে না।

নিজের থেকে যদি বিশ্বাস আর কন্ট্রোল পাওয়ার হারিয়ে যায় তাহলে নিজের দেখা স্বপ্নটাও তাদের সাথে হারিয়ে যাবে। সফল মানুষেরা সবকিছুর পরেও নিজের আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি আস্থা এবং ভরসা রাখেন। এই কারণেই তারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই কাজ করে যেতে পারেন এবং দিন শেষে সফল হয়। তাই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। স্বামী বিবেকান্দ এই বিষয় নিয়ে একটি উক্তি বলেছেন-

নিজের উপর বিশ্বাস রাখো তোমার দ্বারা সম্ভব। জগতে এমন কিছু যা তুমি করতে পারো না। এ সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাও সাফল্য তুমি পাবেই।

# জীবনে খারাপ সময় আসা দরকার। খারাপ সময়ের মোকাবিলা কিভাবে করতে হয়? # কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

Related posts